জলপরানি: কিঙ্কর আহ্‌সান - Jolporani: Kingkor Ahsan

In Stock

Quantity :

Price:   $ 11.65

জাহান গিটার রেখে পাশে থাকা ড্রয়ার থেকে সুঁই-সিরিঞ্জ বের করে। তারপর খুব যত্নে, আগলে রাখা প্যাথেডিন এর অ্যাম্পুল ভেঙে তা থেকে পুরনো সিরিঞ্জে তরলটুকুন নেয়। বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে শিরায় ইনজেকশন পুশ করা হয়। শান্তি। এবার কমবে অস্থিরতা। প্যাথেডিন মনের ব্যাথা কমাবে!
জাহানের রক্তে প্যাথেডিন এর তরল মিশে যেতেই ঘুম ঘুম লাগে তার। শরীর ঘামে। ভাত খাবার পর হাতে তরকারি লেগে থাকলে শুকিয়ে সেটা যেমন কড়কড়ে হয়ে যায় তেমনি আস্ত শরীরটায় এমন কড়কড়ে ভাব টের পাওয়া যায়। বার্বিচুরেটস আর প্যাথেডিন সবচেয়ে বেশি প্রিয় জাহানের। দুশ্চিন্তা চলে গিয়ে ঘুম আসে এতে। একটা আজব মন ভালো করা ক্লান্তির পোকা শরীরজুড়ে ঘুরে বেড়ায়। ভালো লাগে।
জাহান চোখ বন্ধ করে। মায়ের কথা ভুলতে চাইলেও মায়ের মুখটা সবার আগে সামনে চলে আসে। কী মায়া! এই মুখ ভোলা যায়না। নিজের সাথে লড়াই করে জাহান। চোখ বন্ধ করে সব ভুলে যেতে চায়। অথচ চোখের সামনে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে জালিয়াপাড়া গ্রামটা। অই যে দেখা যায় স্কুলের সামনের ফুটবল মাঠ। ‘পাস দে, পাস দে...।’ বলে চিৎকার করে বন্ধু কৌশিক। পাগলা বৃষ্টির ঝাপটা উপেক্ষা করে গোলপোস্ট এর দিকে দৌড়াতে থাকে জাহান। গোলকীপার এর কাছাকাছি যেতেই ল্যাং মারে কেউ একজন। প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে মাটিতে পড়ে যায় সে। চোখে ঢুকে যায় কাঁদা। সব অন্ধকার। ‘আমার চোখ, চোখ...।’ বলে ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠে জাহান। আশেপাশে যেনো কেউ নেই আর। পৃথিবী ডুবে গেছে আঁধার, কালোতে। ঠিক তখনই আবার দৃশ্যপট বদলে যায়। জাহান দেখতে পায় ইকড়ি মিকড়ি রোদের ছাড়ায় তাল গাছ থেকে মাটিতে নেমে আসা তাল নিয়ে বন্ধুদের সাথে ঝগড়ার দৃশ্য। শেষ বিকেলে বাউল শরাফত গেয়ে ওঠে, ‘ও রে, দেহের মরন আছে,/মনের মরন নাই,/আমি অই খাঁটি সোনা মনের দেখা কই পাই-/ কই পাই?’ আর গানের সাথে তাল মিলিয়ে বাজারে হালিম কারিগর ফুলের মতোন সুন্দর পিয়াজু ভাজতে থাকে সন্ধ্যা অবধি। মাগরিবের আযান দিলেই বাড়ি ফেরার তাড়া আছে। তার আগে দীঘিতে ডুব দিয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে শরীর। দীঘির নামটি মনে আছে? জলপরানি দীঘি!

Title জলপরানি
Author
Publisher
Edition ২য় প্রকাশ, ২০২১
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

No review available yet.

'